সামাজিক অনুষ্ঠানে গিফট-আদান প্রদান।বর্তমানে সামাজিক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে।এ বিষয়ে বিস্তারিত পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন।এ ব্লগ সম্পূর্ন পড়ে শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন।
বর্তমানে আমাদের সমাজে অনেক প্রকারের সামাজিক অনুষ্ঠান হয়।যেমন বিয়ে,মুসলমানি,আংটি পড়ানো,বিবাহ বার্ষিকী পালন সহ অনেক প্রকারের অনুষ্ঠান এ সমাজে হয়ে থাকে।তবে এখন আমাদের সমাজে একটা মারাত্মক একটা নিয়ম হয়ে দাড়িয়েছে,সেটা হলো "গিফট প্রথা!"।গিফট দিতে না পারলে বা অনুষ্ঠানের অবস্থা বিবেচনা করে গিফট এর পরিমান কম হয়ে গেলে অনেকে অনুষ্ঠানে যেতে লজ্জা করে।পকেটে গিফটের টাকা না থাকলে বিভিন্ন বাহানায় সে অনুষ্ঠান ত্যাগ করতে হয়।হা! এটাই এখন আমাদের সমাজের নিয়ম হয়ে দাড়িয়েছে।
ধরুন!চৌধুরী সাহবের মেয়ের বিয়েতে যাবেন।চৌধুরী সাহেব এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি।তার মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে গেলে রিসিপ্সনে কিছু লেখাতে হবে।যেহেতু চৌধুরি সাহেবের অনুষ্ঠান সেহেতু ৩-৫ হাজার টাকার কমে লেখালে তো মান ইজ্জত সব যাবে।মানুষ কি মনে করবে।যেখানে অন্যরা ১০-১৫ হাজার লেখাচ্ছে সেখানে আমি কিভাবে ৫ হাজারের কম দেই!
অথবা কারো কারো ক্ষেত্রে তার মাসিক ইনকাম ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা।প্রতি সপ্তাহেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেতে হয়।সপ্তাহে যদি ৪টিও  এমন অনুষ্ঠান থাকে আর অন্ততপক্ষে ২ হাজার করেও দিতে হয় তাহলেও আনুষাঙ্গিক খরচ মিলিয়ে ১০-১২ হাজার টাকার উপরে তার ব্যয় এই গিফট নামক সামাজিক ব্যাধিতে।
আমার মতে এসব সবই অপচয়।আমরা সমাজে এখন গিফটের নিয়ম বেধে দিয়েছি অলিখিত ভাবে।অনেকে সামর্থ্য আছে যারা শুধু গিফট বাবধ এত টাকা খরচ করতে পারে।কিন্তু যাদের সামর্থ্য নেই তারা!?তারাও এখন লোক লজ্জায় পড়ে দিতে হচ্ছে।ভালো মানের গিফট না দিলে যে নাক কাটা যাবে লজ্জায়।
ইসলামের দৃষ্টিতে অপচয় ও লোক দেখানো খরচের শাস্তিঃ
وَكُلُوا وَاشْرَبُوا وَلَا تُسْرِفُوا إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ ﴿31﴾
“এবং আহার করবে ও পান করবে। কিন্তু অপচয় করবে না। তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না” (৭ : ৩১)।
وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيرًا ﴿26﴾ إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُوا إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُورًا ﴿27﴾
‘আর কিছুতেই অপব্যয় করবে না। যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই এবং শয়তান তার প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ”। (১৭ : ২৬-২৭)
ইসলাম ব্যয়ের ক্ষেত্রে মধ্যম পন্থাকে গ্রহণ করেছে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ব্যয় করার ক্ষেত্রে মধ্যমন্থা অবলম্বন করা বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক।”\
গিফট আদান-প্রদান নিয়ে আরো কিছু সমস্যাঃ
প্রথমেই বলেছি অনেকের সামর্থ্য আছে বলে অনেকে দিতে পারে।কিন্তু যাদের নেই?তাদেরও লোক লজ্জায় পড়ে এখন দিতে হয়।যদি এক্কেবারে দিতে অক্ষমই হয় তাহলে বিভিন্ন বাহানা তৈরি করে অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকে।আচ্ছা বলুন তো,এমন অনুষ্ঠানই কি আপনি চান,যে অনুষ্ঠানে গিফট নামক সামাজিক ব্যধীর কারণে আপনার দাওয়াতি মেহমান অনুপস্থিত থাকুক?
সচেতনতা দরকার দু-দিক থেকেইঃ
এ সমস্যা দূরি করনে সচেতনতা দরকার দু-দিক থেকেই।।যারা আয়োজক তারা নিজেদের যেমন সামর্থ্য আছে সেই সামর্থ্য অনুযায়ী আয়োজন করলেই এ সমস্যা থেকে উত্তোরন করা যাবে।কারন অনেককেই দেখেছি গিফত থেকে টাকা পাবে সেই চিন্তা করে তেমন আয়োজন করে।
অন্যদিকে যারা গিফট দেয়ার সামর্থ্য রাখেন তাদের অনুরোধ করবো,আপনারাও যদি আসলেই যিনি দাওয়াত দিয়েছেন তার শুভাকাঙক্ষী হউন তাহলে রিসিপশনে গিয়ে বড় অঙ্কের টাকা লিখাবেন এ নিয়ত না করে যে অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন,যার অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন তার কি প্রয়োজন আছে সে প্রয়োজন মিটানোর ব্যবস্থা করেন।সেটাতেই তার মঙ্গল হবে।কমবে এই ব্যধীটা।
আসুন!লোক দেখানো এই গিফট নামক সামাজিক ব্যাধি থেকে নিজে মুক্ত হই।সমাজকে মুক্ত রাখি।
এবং যুক্ত কণ্ঠে আওয়াজ তুলি "সামর্থ্য অনুযায়ী আমার অনুষ্ঠান আয়োজন করবো।কারো গিফট এর আশায় আমি থাকিনা"


Comments
Post a Comment