যে প্রবন্ধটি পড়ে কেঁদেছিল লক্ষ জনতা।কেউ পুরো লেখাটি না পড়ে লাইক কমেন্ট করবেন না।
الدين الصناعي و الدين الحق  
‘প্রকৃত দ্বীন’ আর ‘আমাদের বানানো প্রচলিত দ্বীন’
মূল; ডক্টর আহমদ আমিন।
মিশরি সাহিত্যিক।(১৮৮৬ - ১৯৫।৪ ঈসায়ী)
অনুবাদ; শায়খ মুহাম্মদ লোকমান
আপনি কি প্রকৃত,সবুজ,শ্যামল গাছ আর প্লাষ্টিকের গাছের মাঝে পার্থক্য আচ করতে পারেন? আপনি কি বাস্তবের সিংহ আর সিংহের ছবির মাঝে যে পার্থক্য আছে তা বুঝতে পারেন? আপনি কি বাস্তবিক দুনিয়া আর ম্যাপ এ দেখা দুনিয়ার মাঝে যে তফাৎ তা অনুধাবন করতে পারেন? আপনি কি জাগ্রত অবস্থায় কথা,কাজ আর ঘুমের মাঝে কথা,কাজ এর মাঝে যে পার্থক্য আছে তা নিরুপন করতে পারেন? আপনি কি মানুষের পরিহিত কাপড় আর ট্রেইলার্সে হেঙ্গারে ঝুলানো কাপড়ের মাঝে পার্থক্য বুঝতে পারেন? আপনার কাছে কি প্রকৃত কান্না আর লোক দেখানো কান্নার মাঝে যে পার্থক্য আছে তা বুঝা যায়? 
যদি এরুপ জিনিসের পার্থক্য আপনি নির্নয় করতে পারেন তাহলে আপনি ‘প্রকৃত দ্বীন’ আর আর আমাদের বানানো ‘প্রচলিত দ্বীনে’র মাঝে পার্থক্য নিরুপন করতে পারবেন। 
সকল লেখকের লেখনী শক্তি,চিন্তা শক্তি থেমে গেছে,জ্ঞানী গুনিরা বইয়ের পাতা উল্টাতে উল্টাতে হয়রান হয়ে গিয়েছে শুধুমাত্র একটি কারণ খুঁজতে।সকলেই অবাক হয় এটা ভেবে কি এমন শক্তি যা প্রথম যুগের মুসলমানদের ছিলো।যা চির বিস্ময়কর।তারা আসলেন,দেখলেন,জয় করলেন। 
আর পরবর্তী মুসলমানরা? তারাও আসলো দেখলো,পরাজিত হলো,লজ্জিত হলো। এর রহস্য টা কি? 
কোরআন তো সেই কোরআন ই আছে,ইসলামের শিক্ষাতো ইসলামের শিক্ষাই আছে,সে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” তো এখনও আছে।আগে যা ছিলো এখনও তো তাই আছে।বরং ইসলামটা ছড়িয়ে গিয়েছে বিভিন্ন দেশে।কত দল বের হয়ে গিয়েছে ইসলামের নামে।ইসলামী কাজ করতে।তারপরও কেন এই অবস্থা! 
এ অবস্থার একটাই কারণ আমার কাছে পরিলক্ষিত হয়।যা ‘প্রকৃত দ্বীন’ আর আমাদের বানানো ‘প্রচলিত দ্বীনে’র পার্থক্য করে দেয়।
লোক দেখানো আমাদের দ্বীন হলো যে,যবর,যের,সাকিন বা কিছু শব্দ মালা। আর ‘প্রকৃত দ্বীন’ হচ্ছে রুহ,কলব আর উত্তপ্ততা। ‘লোক দেখানো দ্বীনে’ নামাজ একটা শারীরিক চর্চার নাম।হজ্ব হলো আনন্দময় একটি যাত্রা।
‘লোক দেখানো দ্বীনে’ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” একটি সুন্দর বানী ছাড়া আর কোনো অর্থ নেই। আর ‘প্রকৃত দ্বীনে’র মাঝে এটাই সব।এই শব্দমালাই আর্থিক এবাদাতে একটি বিপ্লব নিয়ে আসে।সমস্ত বাদশাহদের বাদশাহী এই শব্দের দ্বারাই চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায়। শুধুমাত্র এই শব্দমালা গুলোই সব নাম জশ-খ্যাতীকে তুচ্ছ করে দেয় ।যারা অসাড় প্রভুর দাসত্ব করে তাদের কাছে প্রকৃত প্রভুর চূড়ান্ত বাক্য এটিই।
‘লোক দেখানো আমাদের বানানো প্রচলিত দ্বীনে’র মাঝে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” সকল তাগুতের সাথে হাত মিলাতে পারে।পারে লাঞ্ছনা বঞ্ছনা সহ্য করতে। তবে ‘প্রকৃত দিনে’র অধিকারীর “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” হক্ব ছাড়া কারো সাথে হাত মিলায় না। ‘লোক দেখানো দ্বীনের’ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বাতাসের সাথে উড়ে যায়। আর প্রকৃত দিনের “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” পাহাড়কেও নাড়িয়ে দিতে সক্ষম।
‘লোক দেখানো দ্বীন’ হলো একটি ব্যবসা বানিজ্যের মত।চতুর লোক তার চাহিদামত তা বানিয়ে নিতে পারে।আর ‘প্রকৃত দ্বীন’ হলো একটি রুহ,অন্তর এবং একটি বিশ্বাস। এটা কোনো কাজ নয়,বরং সব কাজকে এটা সৌন্দর্য মন্ডিত করে দিতে পারে।
‘প্রকৃত দ্বীন’ যদি কোনো মৃতের উপরও ভর করে তাহলে তা জীবিত হয়ে যায়।কোনো দুর্বলের উপর ভর করলে দুর্বল সবল হয়ে যায়।এটি এমনই একটি ‘কষ্টি পাথর’,যা কোনো ধাতুর সাথে লাগলে তাকে ‘স্বর্ণে’ পরিণত করে।
এটি এমনই একটি ‘বিশ্বাস’, যা চরম বিস্ময় নিয়ে উপস্থিত হয়েছে।থমকে দিয়েছে সকল জ্ঞান কে,সকল চিন্তাধারা কে। সকলেই হয়রান হয়ে গিয়েছে।কিভাবে সম্ভব।কিভাবে ব্যখ্যা করা যায় এই শক্তিকে! 
‘প্রকৃত দ্বীন’ এমন একটি অমৃত সুধা,যে এটার সামান্য পান করবে তার জীবনের সকল বিষকে মধুতে পরিণত করবে। এটা কেমেষ্ট্রির এমন একটা পার্ট এর মত যে, যদি এটি ধর্মীয় কোনো কাজের সাতে মিশানো হয় তাহলে এই ধর্মীয় কাজগুলোই আল্লাহ তায়ালার কাছে উড়ে উড়ে পৌছে যাবে।
আর যদি এটাকে দুনিয়াবী কাজের সাথে মিশানো হয়,তাহলে দুনিয়ার সব কঠিন কাজকে এটা সহজ করে তুলবে,যদিও কাজগুলো অসম্ভবনীয় পর্যায়ে ছিল।
যে এটাকে পেয়েছে সে ‘বিশ্বজয়ী’।আর যে এটাকে ত্যাগ করেছে সে সর্বহারা।প্রকৃত দিন এমন একটি বৈজ্ঞানিক শক্তি বা কারেন্ট, যেটা আলো ছড়ায়।কল-কলখানার কাজ সহজ করে দেয়। আর যখন সেই কারেন্ট চলে যায়, সব কাজ থমকে যায়।কোনো আলো থাকেনা,কোনো কাজও থাকেনা।সব বন্ধ হয়ে যায়। 
এটি যদি কাঠে লাগানো তারের উপর পরে,তাহলে সেই তারে মধুর সূর আনে।অন্যথায় সেই তার যুক্ত কাঠটি নির্জিব কাঠ হিসাবেই থাকে। 
‘প্রকৃত দ্বীনে’র অধিকারী ব্যক্তি দ্বীনের জন্য বাচে,দ্বীনের জন্য যুদ্ধ করে।
আর ‘আমাদের বানানো লোক দেখানো প্রচলিত দ্বীনে’র অধিকারী ব্যক্তি দ্বীন ব্যবহার করে বাচে।দ্বীন কে ব্যবসা বানিয়ে বাঁচে।তার উপরই ভর করে চলে। ‘প্রকৃত দ্বীন’দার ব্যক্তির স্থান সব রাজত্বের উপরে।সব রাজনীতির উপরে। আর ‘সুবিধাবাদী দ্বীন’দার ব্যক্তি থাকে রাজনীতির সেবক হয়ে।রাজত্বের খাদেম হয়েই তার বসবাস।
‘প্রকৃত দ্বীন’ হচ্ছে কলব ও শক্তি।আর আমাদের বানানো দ্বীন হচ্ছে নাহু সরফ,ওয়াজ মাহফিল,ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ এগুলোই।
‘প্রকৃত দ্বীন’ যখন রুহ আর রক্তের সাথে মিশে যায়,তখন তার দেহে এমন এক রাগ,জিদ সঞ্চার করে,যা কোনো জুলুমের সাথে আপোষ করেনা।এমনকি হক্ব প্রতিষ্ঠা করতে,সত্য প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে যদি তার মৃত্যুও হয় তাও সে পিছপা হয়না।
আর ‘লোক দেখানো প্রচলিত দ্বীনে’র মাঝে টুপিটা হয় অনেক বড়,চকচক করে পাঞ্জাবী- জুব্বা-কাব্বা।পাগড়ী হয় দশ হাত লম্বা। তাদের আবা কাবা গুলো হয় ইয়া বড় বড়।
‘প্রকৃত দ্বীনে’র মাঝে “স্বাক্ষ্য” বা “শাহাদাহ” অর্থ হলো “নিশ্চয় মহান আল্লাহ মুসলমানদের জান ও মাল জান্নাতের বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন।তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাহে।অত;পর মারে এবং মরে।(সূরা তাওবা ১১১)” 
আর ‘আমাদের বানানো লোক দেখানো প্রচলিত দ্বীন’ হচ্ছে ,কেউ কোনো কিতাব লিখলে তার ব্যাখ্যা করা,বিশ্লেষন করা,ভুল গুলি ধরিয়ে দেয়া,সেই কিতাব বা লেখকের পক্ষে বিপক্ষে আরো কিতাব বের করা।বিরোধীমতের লিখকের ভুল শুধরিয়ে খোলা চিঠি দেয়া বা “দাতভাঙ্গা জবাব” নামক কিতাব বের করা। 
‘প্রকৃত দ্বীন’ মানুষের সাথে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক সৌন্দর্য্য মন্ডিত করে।মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক হয় শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশি করার উদ্দ্যেশ্যে। আর ‘লোক দেখানো প্রচলিত দ্বীনে’ মানুষের সাথে সমপর্ক রাখা হয় নাম,জশ,টাকা-পয়সা বা সুবিধাভোগ এর উদ্দ্যেশ্যে। 
সে বলেছে সে সত্যই বলেছে যে “ এই জমানার দ্বীনটা আর আগের মত শুদ্ধ হবেনা।যেটা প্রথম যুগের মুসলমানদের ছিলো”।
তাহলে কি এটা প্রমাণীত হয়না যে,আগের মুসলমানদের কাছে দ্বীনটা একটি রুহ এর নাম,একটি শক্তির নাম।
আর বর্তমানে আমরা দ্বীনটা বানিয়ে নিয়েছি সাজানো গোছানো ব্যবসা হিসেবে।
ঈমানের শান হলো “ইশক”।যা শীতলতাকে তপ্ত আগুনে পরিণত করে।নিকৃষ্ট করে উৎকৃষ্ট করে তুলে।লজ্জিতকে করে চির সম্মানীত।কৃপনকে করে তুলে দানশীল।
‘প্রকৃত দ্বীন’ হলো একটি জাদুর কাঠির মত।সে যেটাকেই স্পর্শ করে তাকে প্রজ্জ্বলিত করে তুলে।জমাট বাঁধা কঠিনতাকেও সহজ করে দেয় এক নিমিষে।মৃত অন্তরকে জীবিত করে দেয় এক নিমিষে। 
এমন কি কেউ আছেন!  যে আমার সব কিছুর বিনিময়ে আমাকে এক ফোটা “দ্বীনে হক বা প্রকৃত দ্বীন” বিক্রি করবেন? আমার কাছে এমন একটি অন্তর আছে,যা পচে গলে গেছে।কেউ কি আছেন ,যে আমার এই পচা-গলা হৃদয়কে ক্রয় করে এক ফোটা উত্তম হৃদয় দান করবেন।
আছেন কি কেউ?? তার অপেক্ষায় …
Comments
Post a Comment