Skip to main content

শবে বরাতের দলিল


দলিল-আদিল্লার ভিত্তিতে শবে বরাত ও শবে বরাতে আমাদের করণীয়
লেখক; রেজাউল মোস্তফা তানভীর

শিক্ষার্থী;ইসলামী ধর্মতত্ব বিভাগ। আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়,কায়রো,মিশর।

আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিনওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু আলা সাইয়িদিল আশরাফিল আম্বিইয়া ই ওয়াস সালিহিনওয়ালা আলিহি ওয়া আসহাবিহি ওয়াবারিক ওয়াসাল্লিম

রবী বার মাসের মাঝে শাবান মাস অত্যন্ত ফজিলত ও বরকতমন্ডিত মাসএ মাসের শোভা বা বরকত আরো বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বা ‘শবে বরাতে’র মাধ্যমেহাদিসের ভাষায় ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ হলেও ভারতীয় উপমহাদেশে আমরা এই রাতকে ‘শবে বরাত’ হিসাবে চিনিশবফার্সি শব্দ,অর্থ;রাত,রজনী

আর বরাত শব্দটি আরবীঅর্থঃ দায়মুক্তি,নিষ্কৃতি,অব্যাহতি ইত্যাদিতএব ‘শবে বরাতে’র পূর্ন অর্থ হলো,দায়মুক্তির রাত বা নাজাতের রাত

ওলামায়ে কেরাম এ রাত্রির মাহাত্ন আলোচনা করতে গিয়ে একে বিভিন্নভাবে নামকরণ করেছেনহযরত আবুল খায়র আত-ত্বালকানী (৫১২ হিজরী ৫৯০ হিজরী) এ রাত্রির এ রকম বাইশটি নাম একত্রিত করেছেনতন্মধ্যে নিন্মে কতেক নাম উল্ল্যেখ করা হলো;

,লাইলাতুল মুবারাকাহ
২,লাইলাতুল কিছমাহ
৩,লাইলাতুত তাকদির
৪,লাইলাতুল ইজাফাহ
৫,লাইলাতুল হায়াত
,লাইলাতুশ শাফায়াহ
৭,লাইলাতুর রুহাজান
৮,লাইলাতুজ তাজিম
৯,লাইলাতুল গুফরানঁ,সহ ইত্যাদি

শাবান মাস সম্পর্কে এমন অনেক বর্ণনা পাওয়া যায় এবং কতেক ঐতিহাসিক তাৎপর্য ঘটনা রয়েছে যা এ মাসকে অনন্য মাসের তুলনায় মহিমান্বিত করেছে।কতেক বর্ণনা ও ঘটনা নিন্মে আলোচনা করছি;

১; কিবলা পরিবর্তন ; ঐতিহাসিক কিবলা পরিবর্তনের ঘটনা এ মাসেই হয়েছিলো।মুসলমানদের সর্বপ্রথম কিবলা ছিলো বাইতুল মোকাদ্দাস,যা পরবর্তীতে পরিবর্তীত হয়ে কা’বাকে করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত ঘটনার বর্ণনা পবিত্র কোরআনে এসেছে
قَدۡ نَرَىٰ تَقَلُّبَ وَجۡهِكَ فِی ٱلسَّمَاۤءِۖ فَلَنُوَلِّیَنَّكَ قِبۡلَةتَرۡضَىٰهَاۚ فَوَلِّ وَجۡهَكَ شَطۡرَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِۚ وَحَیۡثُ مَا كُنتُمۡ فَوَلُّوا۟ وُجُوهَكُمۡ شَطۡرَهُۥۗ)
অর্থাৎ; নিশ্চয় আমি বারবার আকাশের দিকে আপনাকে তাকাতে দেখি।নিশ্চয় আমি আপনাকে ঘুরিয়া দিব সে কেবলার দিকে,যেটা আপনি পছন্দ করেন।এবার আপনি মসজিদে হারামের দিকে মুখ করুন এবং তোমরা যেদিকে থাক,সেদিকে মুখ কর।(সূরা বাকারা ১১৪)

আবু হাতেম আল বাসতাই রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,মুসলমানরা প্রায় সতের মাস বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকে ফিরে নামাজ পড়েন।নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রবিউল আউয়াল মাসের বারো তারিখ মদিনায় প্রবেশ করেন এবং আল্লাহ পাক কিবলা পরিবর্তনের নির্দেশ প্রদান করেন মধ্য শাবান বা শাবান মাসের পনের তারিখ।(কুরতুবি,জামেউল আহকামুল কোরআন ১৫০/২)।

২; আমল উথাপন; শাবান মাসের অন্যতম আরো একটি বৈশিষ্ট্য হলো এ মাসে মহান রব্বুল আলামিন এর নিকট বান্দার আমল উথাপিত হয়। এ মর্মে একটি রেওয়ায়েত পাওয়া যায়।যথা- হযরত উসামা ইবনে যায়দ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে  বর্ণিত,তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলেছিলাম, আমি আপনাকে শাবান মাসের মত অধিক রোজা অন্যান্য মাসে রাখতে দেখিনি।জবাবে রাসূল কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়াসাল্লাম বলেন,
ذاك شهر يغفل الناس عنه بين رجب و رمضان،وهو شهر ترفع فيه الأعمال إلى رب العالمين ،وأحب أن يرفع عملي و أنا صائم
অর্থাৎ; শাবান মাস রজব এবং রমজানের মধ্যবর্তী এমন একটি মাস যে মাসের গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষ খবর রাখেনা অথচ এ মাসে আমল সমূহ আল্লাহ রব্বুল আলামীন এর নিকট উত্তোলন করা হয়।তাই আমি পছন্দ করি যে,আমার আমলনামা আল্লাহ তায়ালার নিকট উত্তোলন করা হবে আমার সাওম পালন অবস্থায়।

(সুনানে আল নাসায়ী,২৩৫৭ সনদ সহীহ)

৩; জীবনকাল ধার্যকরণ ; শাবান মাসে জীবন কাল ধার্য করা হয়। হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন , নিশ্চয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরো শাবান মাস জুড়েই রোজা পালন করতেন।আমি একদা রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললাম, আপনার নিকট রোজা রাখার জন্য সবচেয়ে পছন্দের মাস হলো শাবান। তখন তিনি বলেন,
"إن الله يكتب فيه على كل نفس ميتة تلك السنة،فأحب أن يأتيني أجلي و أنا صأئم"
অর্থাৎ, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা এ বছর যারা ইন্তেকাল করবে তা এ মাসে লিপিবদ্ধ করেন।আমি পছন্দ করি যে আমার মৃত্যু নির্ধারিত হউক রোজাদার অবস্থায়।(মুসনাদে আবি ইয়ালা ৩১২/৮)

** লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান বা শবে বরাতের অস্তিত্ব নিয়ে পূর্ববর্তী ওলামায়ে কেরামদের মাঝে কোনো দ্বিমত ছিলোনা।দ্বিমত ছিলো শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করার ক্ষেত্রে। অর্থাৎ সে রাতে জমায়েত হয়ে ওয়াজ-মাহফিল,জিকির আজকার,দোয়া-মুনাজাত ইত্যাদি।

হযরত আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মদ বিন সিদ্দিকি আল জুমারীর লিখিত রিসালা “"حسن البيان في ليلة النصف من شعبان " এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে এ রাতের উদযাপন শুরু হয় তাবেয়ীদের যুগ থেকে।হযরত খালেদ বিন সা’দান,হযরত মাকহুল,হযরত লোকমান বিন আমের সহ প্রমুখ তাবেয়ী আনুষ্ঠানিকভাবে এ রাত্রি উদযাপন করতেন।বসরা ও শামের তাবেয়ী সহ অন্যন্য মুসলমানগন তা গ্রহণ করেন।

তবে হিজাজের ওলামায়ে কেরামগন তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং তারা বলেন,আনুষ্ঠানিকভাবে এ রাত উদযাপন বিদা্যাহ এবং মদিনা্র ফকিহ হযরত আব্দুর রহমান বিন যাউদ বিম আসলাম ও এটাকে বিদায়াহ বলেছেন।

**শবে বরাতের কোরআনি বিশ্লেষণ ; আমাদের সমাজে একটি কথা প্রচলন আছে, লাইলাতুল কদর নিয়ে পবিত্র কোরআন কারিমে সুস্পষ্ট একটি স্বতন্ত্র সূরা থাকলেও লাইলাতুল বরাত নিয়ে সুস্পষ্ট কোনো সূরা বা আয়াত নেই।যদি এই যুক্তি আমরা মেনে নেই,তাহলে আমাদেরকে বলতে হবে,আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআন এ নামাজ বা জাকাত নিয়েও স্পষ্ট করে কিছু বলেননি।শুধুমাত্র নামাজ পড়া বা জাকাত আদায় করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।সেটা আদায়ের পদ্ধতি বলা হয়নি।সুতরাং কোরআনে নাই এ যুক্তি গ্রহণ যোগ্য হবেনা।আমরা নিন্মের আলোচনা থেকে এ রাত্রির কোরনি বিশ্লেষণ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআন এ ইরশাদ করছেন
     مُّبَـٰرَكَةٍۚ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِینَ،فِیهَا یُفۡرَقُ كُلُّ أَمۡرٍ حَكِیمٍ إِنَّاۤ أَنزَلۡنَـٰهُ فِی لَیۡلَ
নিশ্চয় আমি কোরআনকে নাযিল করেছি এক বরকতময় রাতে,নিশ্চয় আমি সতর্ককারী।এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয়।(সূরা দুখান ৩,৪)

অত্র দুটি আয়াত থেকে আমরা তিনটি বিষয় স্থির করতে পারি।যথা- ১ কোরআন অবতীর্ণ  ২ লাইলাতুল মুবারাকাহ তথা বরকতময় রাত ৩ প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থির করা।

এখানে উল্ল্যেখ্য যে,প্রথম ও তৃতীয় বিষয় নিয়ে কোনো ধরনের মত পার্থক্য দেখা যায়নি,শুধুমাত্র দ্বিতীয় বিষয়টি নিয়ে আমাদের মাঝে মত পার্থক্য দেখা দেয়।লাইলাতুল মুবারাকা বা বরকতময় রাত বলতে এখানে কোন বিষয়টি নির্দিষ্ট করা হয়েছে। নিন্মে আমরা সর্বগ্রহণযোগ্য তাফসির গুলোতে “লাইলাতুল মুবারাকা” বা বরকতময় রাতের কি বিশ্লেষণ করা হয়েছে সেগুলো সম্পর্কে জানার প্রয়াস চালাবো।

১- প্রখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ তাফসীরে ইবনে কাছিরে “লাইলাতুল মুবারাকা” বিশ্লেষণে দুটি রাতের কথা  বলা হয়েছে
هي ليلة القدر.كما قال تعالى إِنَّاۤ أَنزَلۡنَـٰهُ فِی لَیۡلَةِ ٱلۡقَدۡرِ
এটি লাইলাতুল কদরের রাত্রি।যেমন পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে “নিশ্চয় আমি কোরআনকে লাইলাতুল কদরের রাতে অবতীর্ণ করেছি (সুরা কদর ১)
ومن قال "إنها ليلة النصف من شعبان " كما روي عن عكرمة - فقد أبعد النجعة فأن نص القرآن أنها في رمضان والحديث الذي رواه عبد الله بن صالح عن الليث عن عقيل عن زهري أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال "تقطع الآجال من شعبان إلى شعبان ،حتى إن الرجل لينكح و يولده،وقد أخرج اسمه في الموتى" فهو حديث مرسل ومثله لا يعارض به النصوص.
কেউ কেউ বলেছেন,নিশ্চয় এটি শাবান মাসের মধ্য রাত্রি।এ মর্মে হযরত ইকরামা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে।এটি প্রত্যাশা থেকে দূরে কেননা কোরআনের উদ্বৃতি নির্দেশ করে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে পবিত্র রমজানে।এ মতের পক্ষে হাদিসটি বর্ণিত হয়,আব্দুল্লাহ ইবনে সালিহ,ওসমান ইবনে মুহাম্মদ ইবনুল মুগিরা ইবনে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,এক শাবান থেকে পরবর্তী শাবান পর্যন্ত মানুষের মৃত্যু লিপিবদ্ধ করা হয়।এমনকি কোন লোকটি বিবাহ করবে,তার সন্তান হবে তাও নির্ধারণ করা হয়।এবং তার নাম মৃত্যু তালিকা থেকে অপসারণ করা হয়।
এ হাদিসটি মুরসাল ও অনুরুপ পর্যায়ের বর্ণনা সুস্পষ্ট আয়াতের অন্তরায় হতে পারেনা।

২-  প্রখ্যাত তাফসির গ্রন্থ “তাফসিরে তাবরানী” এর মধ্যেও “লাইলাতুল মুবারাকা” বলতে দুটি রাতকে নির্দেশ করা হয়েছে।নিন্মে উল্ল্যেখ করা হলো

ليلة مباركة
الليلة المباركة هي ليلة القدر.أنزل الله فيها القرآن إلى السفرة في السماء الدنيا.فوضعه في بيت العزة ثم كان جبريل ينزل به على النبي صلى الله عليه وسلم شيئا بعد شئ غلى مقدار الحاجة.
অর্থাৎ,লাইলাতুম মুবারাকা বলতে এখানে লাইলাতুল কদরকে বুঝানো হয়েছে।এ রাতে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার আসমানে অবতীর্ণ করেন।পরে এটাকে বাইতুল ইজ্জাতে রাখা হয়।সেখান থেকে হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম প্রয়োজন অনুসারে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর অবতীর্ণ করেন।

عن عكرمة أنه كان يقول "الليلة المباركة هي ليلة النصف من شعبان فيها يقضي كل أمر فيه حكمة و فيها ينسخ لجبريل و ميكائيل و اسرافيل و ملك الموت جميع ما هم موكلون به من سنة إلى سنة. والصحيح: أن الليلة المباركة هي ليلة القدر و عليه أكثر المفسرين
অর্থাৎ; ইকরামা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,তিনি বলেন,লাইলাতুম মুবারাকা বলতে শাবান মাসের মধ্য রাতের প্রতিও ইঙ্গিত করা হয়েছে।এ রাতে প্রজ্ঞাপূর্ণ সকল বিষয় নির্ধারিত হয়।এবং হযরত জিবরাঈল,মিকাঈল,ইসরাফিল, ও হযরত আযরাইল আলাইহিস সালাম সহ বিভিন্ন দায়িত্ব প্রাপ্ত ফেরেশতাদের মাঝে পুরো বৎসরের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয়।

৩- প্রখ্যাত তাফসির গ্রন্থ “তাফসিরে তাবারী” এর মধ্যেও “লাইলাতুম মুবারাকা” বলতে দুটি রাতকে নির্দেশ করা হয়েছে।নিন্মে উল্লেখিত হল-
تلك الليلة ليلة القدر.أنزل الله هذا القرآن من أم الكتاب في ليلة القدر
অর্থাৎ,এই রাত দ্বারা লাইলাতুল কদর কে বুঝানো হয়েছে।এ রাতে আল্লাহ পাক কুরআন অবতীর্ণ করেন।
قال آخرون: بل هي ليلة النصف من شعبان.
অর্থাৎ,কেউ কেউ বলেন, এ রাত দ্বারা শাবান মাসের মধ্য রাতকে বুঝানো হয়েছে।
والصواب من القول في ذلك القول من قال عنى بها ليلة القدر
অর্থাৎ,বিশুদ্ধ মত হলো; এ রাত্রি দ্বারা লাইলাতুল কদরকে বুঝানো হয়েছে।

৪; প্রখ্যাত তাফসির গ্রন্থ  تفسير البيضاوي এর মধ্যেও দুটি মতামত প্রদান করা হয়।নিন্মে উল্লেখ করা হলো-
إنا أنزلناه في ليلة مباركة ليلة القدر أو البراءة ابتدئ فيها إنزاله أو أنزل فيها جملة إلى سماء الدنيا من اللوح المحفوظ
অর্থাৎ, নিশ্চয়ই এখানে লাইলাতুম মুবারাকা বলতে লাইলাতুল কদরকে বা বারায়াহ কে নির্দিষ্ট করা হয়েছে।এ রাতে কুরআন অবতীর্ণ শুরু হয় অথবা পুরো কোরআনকে লাওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আসমানে অবতীর্ণ করা হয়।

এছাড়াও “তাফসীরে কুরতবী,তাফসীরে রুহুল মায়ানী,তাফসীরে বাগাওয়ি,তাফসীরে কাশশাফ,তাফসীরুর রাজি,তাফসীরে জালালাইন,তাফসীরে ফাতহুল কাদির,তাফসীরে আল বাহুরল মুহিত”সহ অসংখ্য তাফসীর গ্রন্থে লাইলাতুম মুবারাকা দ্ব্বারা দুটি রাতকেই বুঝানো হয়েছে।সে দু’রাত হলো লাইলাতল কদর বা শবে কদর এবং লাইলাতুল বারয়াত বা শবে বরাত।

উপরোক্ত বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ সমূহের বরাত দিয়ে আমরা বুঝতে সক্ষম হয় যে,সূরা দুখানের বর্ণিত “লাইলাতুম মুবারাকা” বলতে “লাইলাতুল কদর” না “লাইলাতুল বারয়াত” এ নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও কোনো মুফাসসিরিনে কেরাম “লাইলাতুল বারয়াত”কে বা এর অসংখ্য ফজিলতকে অস্বীকার করেননি বরং দলিল আদিল্লাহ দ্বারা এর ফজিলতের স্বীকৃতি দিয়েছেন।এতএব এটা বলার সুযোগ নেই যে,ইসলামে লাইলাতুম মুবারাকার কোনো অস্তিত্ব নেই।
*সুন্নাহর আলোকে শবে বরাতের তাত্বিক বিশ্লেষণ; লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান বা শবে বরাত সম্পর্কে অনেক হাদিস আমরা পাই।তন্মধ্যে কতেক হাদিস নিন্মে তুলে ধরলাম-

হাদিস নং ০১;
.عن علي بن أبي طالب عليه السلام عن النبي صلى الله عليه وسلم قال"
 إذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا نهارها فإن الله ينزل فيها لغروب الشمس إلى سماء الدنيا، فيقول ألا من مستغفر فأغفر له، ألا مسترزق فأرزقه، أا مبتلى فأعافيه، ألا كذا ألا كذا حتى يطلع الفجر.(أخرجه ابن ماجة-١٣٨٨)
অর্থাৎ,হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন,তিনি বলেন,যখন মধ্য শাবানের রাত আসে তখন তোমরা এ রাতে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় কর এবুং এর দিনে সাওম পালন কর।কেননা এ দিন সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর আল্লাহ পৃথিবীর নিকটতম আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আছো আমার নিকট ক্ষমাপ্রার্থী আমি তাকে ক্ষমা করবো,কে আছো রিজিকপ্রার্থী? আমি তাকে আহার প্রদান করব।কে আছো রোগমুক্তি কামনাকারী,আমি তাকে নিরাময়দান করবো।ফজরের সময় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি এভাবে আহবান করেন।( ইবনে মাজাহ,১৩৮৮)

ফুটনোট - উপরোক্ত হাদিসের বিষয়ে মুহাদ্দিসিনের বক্তব্যঃ

১> ইবনে জাওয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহ বলেন,হাদিসটি সহিহ নয়।
২> ইরাকী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,এর সনদ দ্বয়ীফ।
৩> ইমাম আইনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বুলেন,এর সনদ দ্বয়ীফ।আবু বুর বিন আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মদ তিনি দ্বয়ীফ রাবি ছিলেন।ইব্রাহিম বিন মুহাম্মদ তিনি জমহুর দ্বয়ীফ রাবী ছিলেন।
৪> আলবানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,দ্বয়ীফ জিদ্দান অথবা মাওদু।

হাদিস নং ২;
عن عائشة رضي الله عنها قالت : " فقدت رسول الله صلى الله عليه وسلم ليلة ، فخرجت ، فإذا هو بالبقيع ، فقال : ( أكنت تخافين أن يحيف الله عليك ورسوله ) ، قلت : يا رسول الله ، إني ظننت أنك أتيت بعض نسائك ، فقال : ( إن الله عز وجل ينزل ليلة النصف من شعبان إلى السماء الدنيا فيغفر لأكثر من عدد شعر غنم كلب )
(رواه ترمذي- ٧٣٩)
অর্থাৎ; হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত,তিনি বলেন,একদা আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে হারিয়ে ফেললাম (বিছানায় পেলাম না)।আমি বের হলাম তার সন্ধানে।অত;পর দেখলাম তিনি জান্নাতুল বাকীতে অবস্থান করছেন।তিনি বলেন,তুমি কি ভয় করছ আল্লাহ ও তার রাসূল তোমার প্রতি অবিচার করবেন।আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি অনুমান করলাম আপনি আপনার কোনো অন্য কোনো বিবির নিকট গিয়েছেন।তিনি বললেন,আল্লাহ তায়ালা মধ্য শা’বানী দুনিয়ার কাছের আকাশে অবতীর্ণ হন।তারপর কালব গোত্রের বকরী পালের লোমের চেয়েও বেশি সংখ্যক লোককে তিনি মাফ করে দেন।

ফুটনোট; ইমাম তিরমিজি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার এর এই হাদিসটি প্রসঙ্গে আমরা কিছু অবগত নই।ইমাম বুখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি এ হাদিসকে দুর্বল বলতে শুনেছি।কেননা এখানে দুই জায়গায় রাবির বিচ্ছিন্নতা আছে।সুতরাং হাদিসটির মান দুর্বল।

হাদিস নং ০৩;

عن أبي موسى الأشعري عن النبي صلى الله عليه وسلم قال "إن الله ليطلع ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن"
(سنن ابن ماجه- ١٣٩٠)

অর্থাৎ,রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,আল্লাহ মধ্য শাবানের রাতে আত্মপ্রকাশ করেন এবং মুশরিক ও হিংসুক ব্যতিত তাঁর সৃষ্টির সকলকে ক্ষমা করেন।( সুনানে ইবনে মাজাহ ১৩৯০)

ফুটনোট; আলবানি রহমাতুল্লাহি আলাইহির মতে হাদিসটি হাসান।
উল্লেখ্য যে,এই মতনে বিভিন্ন সনদে হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে।আটজন জলিলুল কদর সাহাবী বর্ণনা করেছেন।হযরত আবু বকর,হযরত আলী,হযরত আয়েশা ,হযরত মুয়াজ বিন জাবাল,হযরত মুছা আশয়ারী,হযরত আবু শুয়াইব,হযরত আউফ বিন মালিক,প্রমুখ।

দয়িফ হাদিসের উপর আমলের হুকুম; 

আমাদের সমাজে কিছু ভাই দেখা যায় হাদিসের মান দ্বয়িফ হলে সেটাকে উপেক্ষা করতে চান।লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান বা শবে বরাত বিষয়ে কিছু দ্বয়িফ হাদিসও পাওয়া যায়,সেটাকে কারণ হিসাবে উপস্থাপন করে প্রতি বছর এ রাত্রিতে মুসলমানদের কে ইবাদত বন্দেগী থেকে দূরে রাখার একটা প্রচেষ্টা আমরা লক্ষ করি।তাই দ্বয়িফ হাদিসের উপর আলোচনা উক্ত প্রবন্ধের সাথে সম্পর্কিত না হলেও যেহেতু শবে বরাতের রাতের আমল নিয়ে কিছু দ্বয়িফ হাদিস আমরা পাই সেহেতু দ্বয়িফ হাদিসের উপর আমলের হুকুম নিয়ে আলোচনার তাগিদ অনুভব করছি।নিন্মে দ্বয়িফ হাদিসের উপর আমলের হুকুম সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত আলোচনা তুলে ধরলাম।

*ইবনে হাজার হাইতামি রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “আদ দুররুল মানসুর” গ্রন্থে উল্ল্যেখ করেন,মুহাদ্দিস এবং ফুকাহায়ে কেরামগন এ বিষয়ে ঐক্যমত পোষন করেন যে ফযিলত,উৎসাহপ্রদান,ভয় প্রদর্শনের জন্য দ্বয়িফ হাদিসের উপর আমল করা জায়েজ আছে।

*ইমাম হাবিব আলাবী ইবনে আব্বাস আল মালেকী আল হাছানী রহমাতুল্লাহি তাঁর "المنهل اللطيف في أحكام الحديث الضعيف" গ্রন্থে বলেন,আহলুল হাদিস তথা হাদিস বিশারদগন এ বিষয়ে একমত হয়েছেন যে,ফজিলতের ক্ষেত্রে দ্বয়িফ হাদিসের উপর আমল করা যাবে।আহমদ ইবনে হাম্বল রহমাতুল্লাহি ,ইবনুল মুবারক,সুফিয়ান,সহ প্রমুখ বিখ্যাত মুহাদ্দিসিনে কেরাম একই কথা বলেছেন,তারা প্রত্যেক হালাল হারামের ক্ষেত্রে হাদিসের সনদের ব্যাপারে কঠোর ছিলেন,তবে ফযিলতের ক্ষেত্রে শিথিলতা প্রদর্শন করেছেন।

*ইবনে মাহদি রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর "المدخل" গ্রন্থে উল্লেখ করেন,যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  থেকে হালাল,হারাম ও আহকাম সংক্রান্ত কোনো রেওয়ায়াত আসতো তখন আমরা সনদের ব্যাপারে কঠিন হতাম,এবং রাবির ছিদ্রান্বেষণ করতাম।আর যখন ফজিলত,সওয়াব ও শাস্তির বিষয় কোনো রেওয়ায়াত আসতো তখন সনদের ব্যাপারে কাঠিন্য  প্রদর্শন করতাম না এবং রাবির খুটিনাটি বের করতাম না।

ইবনে সালাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি হাফেজ ইবনুল আরাবী আল মালেকী থেকে নকল করেন,তিনি বলেন,নিরুংকুশ ভাবে দ্বয়িফ হাদিসের উপর আমল করা জায়েজ নেই।তিনি বলেন ফযিলত ও শরিয়তের সাথে সম্পর্কিত নিরংকুশ ভাবে দ্বয়িফ হাদিসের উপর আমল নতুন নতুন ইবাদাত সৃষ্টি করে আর শরিয়ত কখনো আল্লাহর অনুমোদন ব্যতীত হয়না।

এতএব,উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রতিয়মান হয় যে,প্রথম সারীর উলামায়ে কেরাম এর মতে ফযিলতের ক্ষেত্রে দ্বয়িফ হাদিসের উপল আমল করা জায়েজ এবং এতে কোনো প্রকার মতপার্থক্য নেই।
আল্লাহ তায়ালা অধিক অবগত।
** আয়িম্মায়ে সালাফের বক্তব্য;

১ ; হযরত উমর ইবনে আব্দুল আজিজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বসরায় তাঁর নিয়োজিত এক কর্মকর্তাকে চিঠি প্রেরণ করেন “তোমার জন্য বছরে চারটি রাত রয়েছে,নিশ্চয় এ রাত সমূহে আল্লাহ তায়ালা পরিপূর্ণ রহমত বর্ষণ করেন।সেগুলো হলো ;
রজব মাসের প্রথম রাত্রী,শাবান মাসের মধ্য রাত্রি,ঈদুল ফিতরের রাত্রি,ঈদুল আযহার রাত্রি।

২; ইমাম শাফেয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,পাঁচ রাত্রিতে আমাদের দোয়া কবুল করা হয়।যথা- জুমার রাত্রি,দুই ঈদের রাত্রি,রজব মাসের প্রথম রাত্রি,শাবান মাসের মধ্য রাত্রি।

; হাফেজ ইবনে তাইমিয়াহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,শাবান মাসের মধ্য রাত্রির ফযিলত সম্পর্কিত অনেক হাদিস ও আছার বর্নিত আছে।এ রাতে সলফে সালেহিনগন একাকী ইবাদত করতেন এবং কেউ এ রাত্রির ফযিলতকে অস্বীকার করেনি।

৪; হুজুর গাউছুল আজম আব্দুল কাদের জীলানি রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত কিতাব “গুনিয়াতুত তালেবীন” এ শবে বরাতের ফজলত বর্ণ্না করেছেন।

৫; ইমাম ফাকেহি রহমাতুল্লাহি আলাইহি (ইন্তেকাল ২৭২) বলেন,মক্কাবাসী নারী-পুরুষ সেকাল থেকে আজকের দিন পর্যন্ত ‘শবে বরাতে’র রাতে মসজিদে হারামে এসে নামাজ আদায় করী ,কাবার তাওয়াফ করে এবং রাত্রী জেগে কোরআন খতম করে।

৬; উপমহাদেশের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস শাইখ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দেসে দেহলভী উনার বিখ্যাত কিতাম “ মা ছাবাতা বিছছুন্নাহ ফি আইয়ামিছ ছানাহ”তে  একটি অধ্যায় রচনা করেছেন ‘শবে বরাতে’র উপর এবং এই রাতের ফজিলত ও ইবাদত বন্দেগি বিষয়ে  গুরুত্বপূর্ন হাদিস বর্ননা করে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

এভাবে সালফে সালেহিন ও সকল মাজহাবের মুহাক্কিক ওলামায়ে কেরাম এমনকি মাজহাবের অমান্যকারী ওলামায়ে কেরাম বেশিরভাগ ‘শবে বরাতে’র ফযিলত এবং রাত্রি জেগে ইবাদত করাকে ফজিলতপূর্ন বলেছেন এবং উৎসাহীত করেছেন।
*শবে বরাতের রাতের দোয়া ;  রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে এ রাত্রির নির্দিষ্ট কোনো দোয়া এবং নামাজ পাওয়া যায়নি।তবে সালফে সালহেদিন বিভিন্ন ভাবে এ রাতের আমল করতেন।আমরা সেগুলো অনুসরন করতে পারি।সর্বোপরি আমরা রাত জেগে যেভাবেই ইস্তেগফার,দোয়া,নফল ইবাদাত করিনা কেন তাঁর সোয়াবের ভাগিদার আমরা হবো।

*শবে বরাত সম্পর্কে কতিপয় জাল  হাদিস;

এ রাত্রিতে নির্দিষ্ট নামাজ নিয়ে কোনো সহিহ হাদিসতো নেই বরং কোনো দ্বয়িফ হাদিসও আমরা পাইনা।আমরা দেখতে পাই কিছু মাওদু হাদিস এসেছে যা সর্বদা বর্জনীয়।

জাল বা মিথ্যা হাদিস নং এক;
١.روى ابن الجوزي في "الموضوعات" عن علي عليه السلام عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه قال " عليُّ من صلَّى مائةَ ركعةٍ في النِّصفِ من شعبانَ يقرأُ في كلِّ ركعةٍ بفاتحةِ الكتابِ ، و{قُلْ هَوَ اللهُ أَحَدٌ} عشرَ مرَّاتٍ ، قال النَّبيُّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم : يا عليُّ ما من عبدٍ يُصلِّي هذه الصَّلواتِ إلَّا قضَى اللهُ عزَّ وجلَّ له كلَّ حاجةٍ طلبها تلك اللَّيلةَ ، قيل : يا رسولَ اللهِ وإن كان اللهُ جعله شقيًّا أيجعلُه سعيدًا ؟ قال : والَّذي بعثني بالحقِّ يا عليُّ إنَّه مكتوبٌ في اللَّوحِ أنَّ فلانَ بنَ فلانٍ [ خُلِق ] شقيًّا ، يمحوه اللهُ عزَّ وجلَّ ويجعلُه سعيدًا ، ويبعثُ اللهُ إليه سبعين ألفَ ملَكٍ يكتبون له الحسناتِ ، ويمحون عنه السيِّئاتِ ، ويرفعون له الدَّرجاتِ إلى رأسِ السَّنةِ ، ويبعثُ اللهُ عزَّ وجلَّ في جنَّاتِ عدنٍ سبعين ألفَ ملَكٍ أو سبعَمائةِ ألفِ ملَكٍ ، يبنون له المدائنَ ، والقصورَ ، ويغرسِون له الأشجارَ ، ما لا عينٌ رأتْ ولا أذنٌ سمِعتْ ولا خطر على قلبِ المخلوقين مثلَ هذه الجِنانِ ، في كلِّ جنَّةٍ على ما وصفتُ لكم من المدائنِ والقصورِ ، والأشجارِ ، فإن مات من ليلتِه قبلَ أن يحولَ الحوْلُ مات شهيدًا ، ويعطيه اللهُ بكلِّ حرفٍ من {قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ} في ليلتِه من ذلك تسعين حوراءَ ، لكلِّ حوراءَ وصيفٌ ووصيفةٌ ، وسبعون ألفًا غلمانَ ، وسبعون ألفًا وِلدانَ ، وسبعون ألفًا قهارمةً ، وسبعون ألفًا حجابًا ، وكلُّ من قرأ {قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ} في تلك اللَّيلةِ يُكتبُ له أجرُ سبعين شهيدًا ، وتُقبِّل ما يُصلِّي بعدها ، وإن كان والداه في النَّارِ ، ودعا لهما أخرجهما اللهُ من النَّارِ بعد أن لم يشرِكا باللهِ شيئًا ، ويدخلان الجنَّةَ ، وشفَّع كلَّ واحدٍ منهم سبعين ألفًا إلى آخرَ ثلاثِ مرَّاتٍ . قال النَّبيُّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم : [ والَّذي بعثني بالحقِّ إنَّه لا يخرجُ من الدُّنيا حتَّى يرَى منزلَه في الجنَّةِ كما خلقه اللهُ أو يُرَى له ] والَّذي بعثني بالحقِّ إنَّ اللهَ يبعثُ في كلِّ ساعةٍ من ساعاتِ اللَّيلِ والنَّهارِ – وهي أربعٌ وعشرون ساعةً – سبعين ألفَ ملَكٍ يُسلِّمون عليه ، ويصافحونه ، ويدعون له ، إلى أن يُنفخَ في الصُّورِ ، ويُحشرُ يومَ القيامةِ مع الكِرامِ البررةِ ، ويأمرُ الكاتبين ألَّا تكتبوا على عبدي سيئةً ، واكتبوا له الحسناتِ إلى أن يحولَ عليه الحوْلُ ، وقال النَّبيُّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم : من صلَّى هذه الصَّلاةَ وهو يريدُ اللهَ والدَّارَ الآخرةَ يجعلُ اللهُ له نصيبًا من عندِه تلك اللَّيلةَ
الراوي:علي بن أبي طالب المحدث:ابن الجوزي المصدر:موضوعات ابن الجوزي الجزء أو الصفحة:2/440 حكم المحدث:موضوع

অর্থাত,হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর সনদে একটি জাল হাদিস বর্নিত আছে,নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,” হে আলী! যে ব্যক্তি প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহা ও সূরা ইখলাস সহকারে নামাজ আদায় করবে আল্লাহ পাক তাঁর প্রত্যেক চাওয়া পূরণ করবেন যা সে চায়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলা হলো ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! যদি কোনো দূর্ভাগ্যবান থাকে তাহলে কি তাকে সৌভাগ্যবান করে দেয়া হবে?
তিনি বলেন,যিনি আমাকে সত্য হিসাবে পাঠিয়েছেন তাঁর শপথ! হে আলী নিশ্চয় তিনি লওহে মাহফুজে নির্ধারন করে রেখেছেন, অমুক অমুখ দূর্ভাগ্যবান,অবশ্যই আল্লাহ পাক তাঁর দুর্ভাগ্য মুছে দিয়ে তাকে সৌভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত করবেন।অত;পর এ বিষয়ে আরো লম্বা জাল হাদিস বর্ণিত আছে।ইবনুল জাওযী রহমাতুল্লাহি আলাইহি একে জাল বলেছেন।

জাল হাদিস নং ২;

.روى ابن الجوزي في كتاب "الموضوعات و الأباطيل" عن ابن عمر " من قرأ ليلة النصف من شعبان ألف مرة قل هو الله أحد في مائة ركعة لم يخرج من الدنيا حتى يبعث الله إليه في منامه مائة ملك ثلاثون يبشرونه بالجنة و ثلاثون يؤمنونه من النار و ثلاثون يعصمونه من أن يخطئ و عشرة يكيدون من عداء"
حديث مكذوب حكم ابن الجوزي و غيره بوضعه.

অর্থাৎ,ইমাম জূযক্বানী তাঁর “মাওযূয়াত ও আবাতিল” গ্রন্থে ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত একটি জাল হাদিস উল্লেখ করেন, “যে ব্যক্তি একশ রাকাত নামাজে এক হাজার বার সূরা ইখলাস পড়ে শাবান মাসের মধ্য রাত্রিতে নামাজ আদায় করে তাদের কে আল্লাহ দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নিবেন না তাঁর স্বপ্নে একশত ফেরেশতা প্রেরণ না করা পর্যন্ত।যাদের মধ্যে ত্রিশজন তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিবে,ত্রিশজন জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবে,ত্রিশজন তাঁর ভুল গুলো শুধরিয়ে দিবে আর দশজন তাকে শত্রু হতে রক্ষা করবে”।

ইবনুল জাওজি ও অন্যান্য মুহাদ্দিসগন এ হাদিসকে জাল বলেছেন।

জাল হাদিস নং ৩ ;
عن علي عليه السلام قال "رأيت رسول الله -صلى الله عليه وسلم- ليلة النصف من شعبان قام فصلى أربع عشرة ركعة ثم جلس بعد الفراغ فقرأ بأم القرآن أربع عشرة مرة و آية الكرسي مرة و لقد جاءكم رسول الآية فلما فرغ من صلاته سألته فقال من صنع مثل الذي كان له كعشرين حجة مبرورة و كصيام عشرين سنة مقبولة فان أصبح في ذلك اليوم صائما كان له كصيام سنتين سنة ماضية و سنة مستقبلة"
حديث مكذوب حكم بوضعه البيهقي و ابن الجوزي والسيوطي و غيرهم

অর্থাৎ, অত্র জাল হাদিসে ইমাম জুযক্বানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেন,হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু  হতে বর্ণিত,তিনি বলেন, “আমি নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখেছি শাবান মাসের মধ্য রাত্রিতে চৌদ্দ রাকাত নামাজ পড়তেন অত;পর কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে চৌদ্দবার আয়াতুল কুরসি এবং একবার “লাকাদ জা’আকুম “ আয়াতটি পড়তেন।তিনি যখন নামাজ থেকে পৃথক হতেন তখন হলেন তখন বললেন,যে ব্যাক্তি এভাবে আদায় করবে তাঁর জন্য বিশটি মাবরুর হজ্বের সওয়াব ,গত বিশ বছর রোজা রাখার সওয়াব।আর যে ব্যক্তি এ দিনে রোজা রাখবে সে গত দুই বছরের রোজার এবং ভবিষ্যতের দুই বছরের রোজার সোওয়াব লিপিবদ্ধ করা হবে।
ইয়াম বায়হাকী,ইবনে জাওযী ও সুয়ূতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি সত্যায়ন করেছেন যে এই হাদিসটি জাল।

এভাবে শবে বরাতের ফজিলত নিয়ে অসংখ্য জাল হাদিস বিদ্যমান আছে।এ সমস্ত জাল হাদিসের উপর আমল করা থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে।খেয়াল রাখতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে গিয়ে আমরা যেন আল্লাহকে রাগান্ব্বিত না করে ফেলি।আল্লাহ আমাদের সঠিক আমল করার তৌফিক দান করুক আমিন।
**শবে বরাত ও আমাদের সংস্কৃতি;

মুসলমানদের জন্য অতি সম্মানিত রাত হিসাবে সর্বাজন পরিচিত “শবে বরাত” এর রাত।ইসলাম ধর্মালম্বীদের এ রাতকে খুব ভাবগাম্ভির্যের সাথে পালন করে।এর সাথে আরেকটি প্রচলিত ও গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হচ্ছে,বাড়িতে বাড়িতে হালুয়া-রুটি তৈরি এবং প্রতিবেশিদের মাঝে বিতরন।
এমনকি এটা বাঙ্গালী সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।কিন্তু কিছু কাল যাবত আমাদেরই কিছু ভাই এ কর্মকান্ডকে বিদাতের ট্যাগ লাগিয়ে মানুষকে একটী জায়েজ ও পূণ্যময় কাজ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু আমার বোধগম্য হয়না যে,মানুষকে খাওয়ানোর সাথে বিদআতের কি সম্পর্ক কি,হোক সেটা সেটা শবে বরাতের মত পবিত্র রজনীকে উপলক্ষ্য করে।
হ্যা আমরা এটাকে নাজায়েজ বা অবৈধ ফতোয়া দিতাম যদি মানুষ সেটা ফরজ বা ওয়াজিব মনে করতো,কিন্তু হালুয়া রুটি বা ভালো খাবার তৈরি করে মানুষকে বন্টন করা কেউ ফরজ বা ওয়াজিব হিসাবে পালন করেনা,শুধুমাত্র প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জন করাই লক্ষ্য থাকে।আমরা এটাকে মুস্তাহাব বা ভালো কাজ হিসাবে ধরে নিতে পারি।কেননা এই খাবার অধিকাংশ গরিব-মিসকিন বা ফকিরদের মাঝে বন্টন করা হয়ে থাকে।আর গরিব মিসকিনদের মুখে খাবার তুলে দেয়া এটা কতটুকু ফজিলত পূর্ণ সে সম্পর্কে প্রত্যেকেই অবহিত।পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন

(وَیُطۡعِمُونَ ٱلطَّعَامَ عَلَىٰ حُبِّهِۦ مِسۡكِینا وَیَتِیما وَأَسِیرًا)
[Surah Al-Insan 8]

অর্থাৎ,তারা আল্লাহর প্রেমে মিসকিন,ইয়াতিম ও বন্দীকে আহার্য দান করে।( সূরা আল ইনসান-৮)
পবিত্র হাদিস শরিফেও মানুষকে খাবার খাওয়ানোর ফজিলতের ব্যাপারে অসংখ্য হাদিস পাওয়া যায়।যেমন
عن عبد الله بن عمرو قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم "اعبدوا الرحمن و أطعموا الطعام و أفشوا السلام تدخلوا الجنة بسلام'

অর্থাৎ,হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্নিত,তিনি বলেন,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,তোমরা দয়াময় রহমানের ইবাদাত কর,মানুষকে খাবার খাওয়াও এবং সালামের অধিক প্রচলণ ঘটাও,তবেই নিরাপদে জান্নাতে যেতে পারবে।(সহীহ,ইবনু মাজাহ ৩৬৯৪)

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم أيضا "يا أيها الناس أفشوا السلام  أطعموا الطعام و صلوا بالليل والناس نيام تدخلوا الجنة بسلام'

অর্থাৎ,হে লোক সকল! তোমরা পরষ্পর সালাম বিনিময় কর,অভুক্তকে আহার করাও,রাতের বেলা মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামাজ পড়।তাহলে তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে।(তিরমিজি ২৪৮৫)

এছাড়াও,নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিষ্টি পছন্দ করতেন।


عن عائشة -رضي الله عنها- قالت كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يحب الحلواء والعسل
অর্থাত,হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হালুয়া ও মধু ভালোবাসতেন।(সহিহ বুখারী,৫৪৩১)

আর হালুয়া রুটির এই সংস্কৃতি বাংলাদেশ ভুখন্ডে কিভাবে কিভাবে চালু হয় এ নিয়ে প্রখ্যাত সংবাদ মাধ্যম বিবিসি বাংলায় গত ১ মে ২০১৮ তারিখে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।

সে রিপোর্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির অধ্যাপক মুহাম্মদ ইব্রাহিম স্যার একটি বক্তব্য প্রদান করেন,যাতে কিছুটা হলেও ইতিহাস পাওয়া যায়।
তিনি বলেন,ত্রয়োদশ শতাব্দিতে তারতের দিল্লীতে ইসলাম রাজনৈতিকভাবে আসে।সে সময় তৎকালীন বাংলাদেশ ভূ-খন্ডে ইসলাম ধর্মের আবির্ভাব হয়।

তিনি আরো বলেন,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবাদের যুগেও এ উপমহাদেশে তাঁর ঘনিষ্ঠজনরা সুদূর আরব দেশ থেকে ইসলাম যে বিভিন্ন দেশে এসেছে এগুলোর সাথে কিছু কিছু দেশজ উৎপাদন যুক্ত হয়েছে।আমরা মানি যে,রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিষ্টি খুব পছন্দ করতেন।তার পছন্দের জিনিসকে উম্মতরা পছন্দ করবে সেটাও তাকে পছন্দ করার একটি ধরন,ফলে মিষ্টির একটা জনপ্রিয়তা মুসলিম সমাজে আছে।
তিনি মনে করেন,শবে বরাতের সময় হালুয়া রুটি বানানো এবং বিতরণ করার সাথে আনন্দ ভাগ করে দেয়ার একটি সম্পর্ক আছে।
আনন্দের ভাগটা অন্যদের দেয়ার জন্যই বিতরন করার রেওয়াজটা রয়েছে।এর সাথে ধর্মীয় অনুভূতি এবং সামাজিকতা রক্ষা দুটো বিষয় জড়িত আছে,বলেছেন অধ্যাপক ইব্রাহিম।
বাংলাদেশ ভু-খন্ডে ‘শবে বরাত’ পালনের ব্যাপক প্রচলণ শুরু হয় ১৯শ শতকের শেষের দিকে।তখন ঢাকার নবাবরা বেশ ঘটা করেই শবে বরাত পালন করতেন।

ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসির মানুন বলেন,সে সময়ে ঢাকার নবাবরা ‘শবে বরাতে’র সময় আলোকসজ্জা করতো।এরপর পাশাপাশি মিষ্টি বিতরন করতো।ইতিহাসবিদদের মতে সে সময়ে যেহেতু মিষ্টির দোকানি খুব একটা প্রচলিত ছিলনা,সে জন্য মিষ্টি জাতীয় খাদ্য বানানোর উপাদান দিয়ে বাড়িতে হালুয়া তৈরির প্রচলণ শুরু হয়।ধীরে ধীরে এর বিস্তার ঘটতে থাকে।।পাকিস্তান আমলে এর সাথে সরকারি ছুটি যুক্ত হওয়ায় সেটি পালনের ব্যাপকতা আরো বেড়েছে বলে অধ্যাপক মুনতাসির মামুন উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন,একটা সময় ছিলো যখন ঢাকায় ‘শবে বরাত’ পালনের বিষয়টি ছিল সুন্নি মুসলমানদের মধ্যে।ইতিহাসবিদদের মতে,বর্তমান বাংলাদেশে শবে বরাত পালন ধর্ম এবং সংস্কৃতির অংশ হয়ে গিয়েছে।

একটি কথা উল্লেখ না করলেই নয়,সংস্কৃতি ও ধর্ম কহনো বিপরীত নয় যদি সেটা কোরআন সুন্নাহ বিপরীত না হয়।ইতিমধ্যেই কোরান-হাদিস ও ইতিহাস বিশ্লেষণ করে আমরা বুঝতে সক্ষম হলাম যে,শবে বরাত উপলক্ষে হালুয়া রুটির বন্টন এটা খারাপ কোন কাজ নয় যে পবিত্র দিন বা রাত্রিকে উপলক্ষ করে এটা করা যাবেনা।যেমনই ভাবে ‘শবে বরাতে’র হালুয়া রুটি আমাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ তেমননি রোজায় বুট মুড়ি বা ঈদে সেমাই ইত্যাদিও আমাদের সংস্কৃতির অংশ।তাহলে ফতোয়া কেবল হালুয়া রুটির বেলায় কেন তা ফতোয়া দাতাগনের নিকট প্রশ্ন রেখে গেলাম।জোরালো ভাবে বলে গেলাম,যেটি ভক্ষন করা হালাল সেটি ৩৬৫ দিনই হালাল।একদিনের জন্য কোন খাবার হারাম হয়ে যেতে পারেনা।
আমাদের করণীয় ও বর্জনীয়;
শবে বরাত উপলক্ষে নফল রোজা রাখা,নফল নামাজ পড়া,কিরাত ও রুকু সেজদা দীর্ঘ করা,বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা,দুরুদ শরিফ বেশি বেশি পড়া,ইস্তেগফার অধিক পরিমানে পড়া,দোয়া তাসসবিহ তাহলিল,জিকির-আজকার,কবর জিয়ারত,নিজের জন্য ও পিতা মাতার জন্য দোয়া করা,এছাড়াও আত্মিয়-স্বজন,দেশবাসী তথা বিশ্বের সকল মুসলমানের জন্য দোয়া করা আমাদের করণীয়।

সর্বোপরি,শবে বরাত হলো ইবাদাতের রাত।দান খায়রাত করা ও মানুষকে খাওয়ানো এক প্রকার ইবাদাত।তবে এই রাতকে হালুয়া রুটির খাওয়ার রাতে পরিণত করে ইবাদাত থেকে গাফেল হওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়।তেমনি হালুয়া রুটির উপর ফতোয়া প্রদানও প্রজ্ঞা প্রসূত নয়।
আর এ রাতে বর্জনীয় কর্মকান্ড গুলো হলো,যথাক্রমে আতশবাজি,পটকা ফোটানো,ইবাদাত বন্দেগী বাদ দিয়ে খামাখা ঘুরাঘুরি করা,আযাচিত আনন্দ উল্লাসে মত্ত থাকা,অনর্থক কথা বার্তা ও বেপোরোয়া আচরণ করা,কারো ইবাদাত বা ঘুমে বিগ্ন ঘটানো,হালুয়া-রুটি বা খাবার দাবারের পিছনে বেশী সময় ব্যয় করা,ইবাদাতে উদাসীনতা।

উক্ত প্রবন্ধে শবে বরাত বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ এগারটি বিষয়বস্তু সামনে রেখে আলোচনার প্রয়াস করেছি।কোনো বিষয় যাতে অস্পষ্টতা থেকে না যায় সেদিকে মনোযোগ দেয়া হয়েছে।এমনকি যথাসম্ভব নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস রেখে বলতে পারি এ প্রবন্ধ পড়লে পাঠকগন “লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান” বা “শবে বরাত” সম্পর্কে সত্যের দিশা পাবেন।তারপরও বিশেষজ্ঞদের নিকট কোন ভুল পরিলক্ষিত হলে আমাকে শুধরিয়ে দেয়ার জন্য কড়জোড় অনুরোধ করলাম।আল্লাহ পাক সবাইকে সত্য উপলব্ধি করার তৌফিক দান করুক আমিন।


Comments

Popular posts from this blog

বাংলাদেশের গর্ব নতুন আজহারী আব্দুল মোস্তফা রাহিম

বিশ্বের  সবচেয়ে  প্রাচীন  ইসলামিক  বিশ্ববিদ্যালয়  থেকে  গ্রেজুয়েশন  শেষ  করে  দেশে  ফিরে  ইসলাম  প্রচার  করছেন  আল্লামা  বাকী  বিল্লাহ  রহঃ  এর  বড়  সাহেবজাদা  আব্দুল  মোস্তফা  রাহিম   আল আজহারী। জন্ম :  ১৫  সেপ্টেমবর   ১৯৯১ ইং। বাবা :  আল্লামা  বাকী  বিল্লাহ  রহঃ । পড়ালেখা :  জামেয়া  গাউছিয়া  তৈয়্যবিয়া  তাহেরিয়া   মাদ্রাসা , জামেয়া  আহমাদিয়া  সুন্নিয়া , কাদেরিয়া  তৈয়্যবিয়া  আলিয়া কামিল   মাদ্রাসা ,  আল আজহার  বিশ্ববিদ্যালয়। দ্বীনি খেদমত :  বাংলাদেশের   প্রায়   সব  যায়গায়  উনার  পরিচিতি  বিস্তৃত।ওয়াজ  মাহফিলের  মাধ্যমে  ইসলামের  আলোচনা  দেশ বিদেশে  করে থাকেন।এ ছাড়াও  বিজয়  টিভি  এর  নিয়মিত  আলোচক এবং ঢাকার  হাবিবিয়া  মসজিদের ...

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ইসলামের কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস দেখুন

           নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ইসলামের কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস দেখুন                                                                            নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চুল মুবারাক                                                                                          হাজরে আসওয়াদ                                                               ...

যাকাত আদায় করার যুগোপযগী কিছু পদ্ধতি

 যাকাত আদায় করার যুগোপযগী কিছু পদ্ধতি লেখক;মুহাম্মদ গোলাম পাঞ্জেতান আসসালামু আলাইকুম।আশা করি সবাই ভালো আছেন।সামনে আসছে মাহে রমজান।মুসলমান মাত্রই এ মাসের জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে।কারণ এটা কোরআনের মাস।সিয়াম-সাধনার মাস।ইসলামের মাঝে এ মাসের ফজিলতের শেষ নেই।সাধারণ সময়ে একটি সোয়াবের যায়গায় রমজান মাসে ৭০টি সোয়াব দান করে মহান আল্লাহ।আল্লাহ জাল্লাজালালুহু সব সময় চায় তার বান্দাদের মুক্তির ব্যবস্থা করে দিতে।বান্দা কিভাবে নেক বেশি করবে সেই ব্যবস্থা আল্লাহ পাক বেশি করে দেন এই রমজান মাসে।শয়তানের ওয়াসওয়াসাও কম থাকে এ মাসে।যার ফলে মানুষ ইবাদাত করে বেশি।সোয়াব বেশি হওয়ার কারনে সামর্থ্যবান মুসলমান রমজান মাসেই “যাকাত”দিতে পছন্দ করেন বেশি।ইসলামে ৫টি মূল স্তম্ভের মাঝে “যাকাত” অন্যতম।তাই আজকের ব্লগটি ‘ যাকাত ’ নিয়ে। কিভাবে যাকাত দিবেন,কোথায় দিবেন,কাদের দিবেন,কি পদ্ধতিতে দিবেন এ নিয়ে বিস্তারিত লেখার প্রয়াশ পাচ্ছি।পুরো টা পড়ে সংরক্ষণে রাখুন।আশা করি কাজে আসবে। যাকাত নিয়ে কোর আন -হাদিসের কিছু বানীঃ যাকাত নিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা কোরআন পাকে ইরশাদ করেন; “সফলতা অর্জন করে তারাই,যা...